শুক্রবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২০

স্মৃতিতে অবিনশ্বর

 নিধুভূষণ দাস


যে ভাস্কর্য ভেঙ্গে দিলে তোমরা

পঁয়তাল্লিশ বছর আগে যে ফুল 

ছিঁড়ে ফেলেছিলে নিছক প্রতিহিংসায়

তার স্মৃতি কি মুছে দিতে পেরেছো

তুমি মধ্যযুগীয় নির্মমতায়?


নশ্বর জীবনে কিছু কিছু মানুষ

অবিনশ্বর হয়ে যায় অম্লান কীর্তিতে

হিংস্রতায় নেভেনা সেই অনির্বান স্মৃতি


ভেবে দেখ,তুমি যে নবীকে মানো

শ্রদ্ধায়,ভালবাসায় তার কায়া  ভেসে

ওঠে তোমার মনের আঙ্গিনায়

সেই মূর্তি ভাঙ্গবে কোন অবিশ্বাসে!


অবিনশ্বর যিনি পিতৃঘাতী পিশাচের

ছোঁয়ার বাইরে তিনি

যে ফুল ছিঁড়েছিলে তুমি 

যুগে যুগে তাই প্রস্ফুটিত হয়-

ভাস্কর্যে,কবিতায়,গানে ও ক্যানভাসে।

বুধবার, ৭ অক্টোবর, ২০২০

ভাঙ্গনের ভয়ঙ্কর আবহে

 ভাঙ্গনের ভয়ঙ্কর আবহে 

নিধুভূষণ দাস



আর কতদিন দূরে দূরে থাকা

আর কত‌ সমাজ থেকে আলগা

হওয়া, শারীরিক বন্ধন মুছে ফেলা

আবেগের আবেদন অস্বীকার করা

এই নিষ্ঠুর সময়ে মানসিক দূরত্ব

গড়ে তুলে সমাজটাই ভেঙ্গে দেওয়া?


সমাজ নেই তো ভালবাসা নেই

ভালবাসা নেই তো আবেগ নেই

আবেগ নেই তো হৃদয় নেই

হৃদয় নেই তো অশ্রু নেই

অশ্রু নেই তো জীবন নেই।


তাহলে কি ভাব নয়, বিজ্ঞান

মানুষ নয়,রোবট,বোধ নয়

কৃত্রিম বুদ্ধিই ভবিতব্য তোমার

হে নিয়েনডার্থেলের উত্তরসূরী!


আশ্বিনে চলছে শ্রাবনের ধারা

মেঘে ঢাকা আকাশে গর্জন-

এই বুঝি জীবনের ভাষা

আবেগী মন নিয়ে বেঁচে থাকার

অবলম্বন এই করোনা-সময়ে

ভাঙ্গনের ভয়ঙ্কর আবহে !


শুক্রবার, ১৪ আগস্ট, ২০২০

সভ্যতা উপদেশ দিতে জানে

 সভ্যতা উপদেশ দিতে জানে

নিধুভূষণ দাস


"ও দাদা ধরুন না একটু,ও দাদা

আপনার তো মুখে মাস্ক আছে,

ধরুন না একটু! আমি একা‌ পারি?"


হে অসাহায় রমনী, জানেন না বুঝি?

মানুষের মুখে মাস্ক থাকে বরাবরই-

ধূর্ততা ঢাকতে মাস্ক পরতেই হয়।


তিলোত্তমা কলকাতার খুব কাছে

 এক হাসপাতাল চত্বরে সেদিন

 কোনো এক কোভিড রোগীর

স্ত্রীর এই আকুল ডাকে সাড়া মেলেনি।


তবে অযাচিত উপদেশ মিলেছে:" উঠে

পড়ুন কাকা,উঠতে পরলেই বেঁচে

যাবেন",স্ত্রী হাত ধরে প্রাণপন

টানছিলেন,তিনি উঠতে পারেননি।


নিজের পায়ে‌ দাঁড়াতে না পারলে

অন্যের উপদেশে ‌ বাঁচা যায়না,

এটাই সভ্যতার প্রথম পাঠ

সভ্যতাগর্বী বাংলায়;দ্বিতীয় পাঠ:

সভ্যতার সঙ্গে মানবতার কোনো

সম্পর্ক নেই,সভ্যতার মূল অর্থ

 আত্মস্বার্থ সংরক্ষণ,মগুজে 

শ্রেষ্ঠ প্রাণী ধূর্ততায় বাঁচে মরে।


কোভিড তো এই সভ্যতারই দান,

প্রক‌তির বিরুদ্ধে লোভাতুর মানুষের

 জেহাদের অনিবার্য ফল।



এখন বুঝবেন স্বামী-হারানো

অসহায় স্ত্রী,তাকে‌ বাঁচতে হবে

নিজের জোরে, হৃদয়বান বন্য

 কিংবা উদাসীন সাধুর‌ মতো।

 

সোমবার, ৮ জুন, ২০২০

মানুষের চেয়ে বড় অমানুষ

মানুষের চেয়ে
 বড় অমানুষ
 নিধুভূষণ দাস

গণতন্ত্র আবারও হেরে গেল লিঙ্কনের দেশে
ধর্মনিরপেক্ষতা বিপর্যস্ত বঙ্গবন্ধুর বাংলায়
বর্ণবিদ্বেষ আর সম্প্রদায় বিদ্বেষের ‌এই পৃথিবীতে নিরাপদ নয় ফ্লয়েড, নিখিল।

আমি শ্বাস নিতে পরছি না… ছিনা….না.. আ
রুদ্ধ শ্বাসে বলছিল কৃষ্ঞাঙ্গ ফ্লয়েড
স্বেতাঙ্গ‌ পুলিশের হাঁটু চাপা দেয় তার কন্ঠ।
মহামতি লিঙ্কন,দেখে যান আপনার দেশে
এখনও বর্ণবিদ্বেষ কতটা‌ প্রকট।

 কৃষক নিখিল তালুকদার অবসরে তাস
খেলছিল,এই তার অপরাধ!
প্রিয় বঙ্গবন্ধু,এও সম্ভব আপনার দেশে,
আপনার গোপালগঞ্জে - নিখিল খুন হলো পুলিশের হাতে‌! হে বঙ্গবন্ধু কন্যা, আপনার নির্বাচনী কেন্দ্রে নিখিলের জীবনের অধিকার
ভূলুন্ঠিত হলো আপনারই পুলিশের হাতে।

গণতন্ত্র কেনো,কোনো তন্ত্রেই নিরাপদ নয়
ক্ষমতাহীন সাধারণ মানুষ, রাজপথে
পুলিশের গুন্ডামি, রাজনীতিতে প্রবল ভন্ডামি
কেড়ে নেয় নিরীহ মানুষের মৌলিক অধিকার।

আজ মানুষের চেয়ে বড় অমানুষ
মানবিকতা হার মানে রাজনীতির কাছে
মানবাধিকারের নামে দিব্যি চলে ধান্দবাজী
স্লোগানে চাপা পড়ে নির্যাতিতের কান্না
সংসদে চেঁচামেচিতে হেরে যায় সংবিধান।
একবিংশ শতাব্দীর পৃথিবীতে
 বিপন্ন ক্ষমতাহীনের মানবাধিকার।

কাঁদুন মহামতি লিঙ্কন, কাঁদুন!
আপনার গণতন্ত্রের ধারণা ওরা
অপ্রাসঙ্গিক করে দিচ্ছে আপনারই দেশে 
ফ্লয়েডকে ওরা জনগণের অংশ মানেনি।
আবার আসুন ফিরে হে ক্যাপ্টেইন
গেটিসবার্গে‌,মনে করিয়ে দিন:
গণতন্ত্র মানে জনগনের দ্বারা নির্বাচিত, জনগণের সরকার,ফ্লয়েডদের সরকার।

চোখের জলে প্রিয় পদ্মায় অকাল বন্যা
আনুন, অকুতোভয় বঙ্গবন্ধু 
আপনার ধর্মনিরপেক্ষতা হার‌ মানছে ধর্মান্ধতার কাছে,সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে
ফিরে এসে বজ্রকন্ঠে ঘোষণা করুন:
নিখিলহীন দেশ  আমার নয়, তোমারও না।

বেঁচে থাকুন লিঙ্কন, বেঁচে থাকুন বঙ্গবন্ধু
জাতির বিবেক হয়ে, মানবতার
অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে আমাদের মাঝে। 

বৃহস্পতিবার, ১৪ মে, ২০২০

আমি কারো বিরুদ্ধে নই

আমি কারো বিরুদ্ধে নই 
নিধুভূষণ দাস

কথাটা বলে ‌ফেলাই‌ ভাল
আমার কোনো রাজনীতি নেই
আমি কারো বিরুদ্ধে ‌নই
সবাই আমার আপন
বিশ্বাস করুন
আমি সবাইকে সমীহ করি
কারণ আমার বুক দূরু দুরু।

কাউকে দেখলেই ভয়ে অবশ হয়ে যাই
আমি প্রকাশ্যে মাথা তুলি না
গুরুত্বহীন হয়েই আমি নিরাপদ থাকতে চাই
প্রতিবাদ আমার ধাতে নেই
শিকারীর তাড়া খাওয়া হরিণীর মতো
আমি প্রাণ ভয়ে ছুটছি তো ছুটছিই
আমার মাথার দিব্যি 
আমি কারো‌ বিরুদ্ধে নই
আমার কোনো‌‌ রাজনীতি নেই।













বুধবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২০

করোনা চলে গেলে

করোনা চলে গেলে 
নিধুভূষণ দাস

আবার আসিব ফিরে হুগলী নদীটির তীরে
করোনার বিপদ কেটে গেলে এই বাংলায়
ছড়াইবো বাণী অবিরাম,লিখিবো খোলা চিঠি
নানা জনে, প্রতিবাদে সোচ্চার হবো,বিবৃতির তুফান
তুলবো এদিকে সেদিকে,করোনা চলে গেলে সরব‌ হবো
সুবিধা মতো,সন্ধ্যা কেটে যাবে টিভির পর্দায় ভেসে
কেউ বলিবে বুদ্ধিজীবী,কারো মতে বিশিষ্টজন
সবাই জানে, আমাদের কথা অমৃতসমান।

করোনার আতঙ্কে ঘরে বসে আঁকিতেছি ছবি, 
একান্তে গাহিতেছি গান,ভাবিতেছি ফিরে ছড়াইবো কোন বাণী,কার লেখা স্ক্রিপ্ট পড়িবো কার প্রয়োজনে।

আবার আসিব ফিরে হুগলির তীরে নয়া মহিমায় 
এই বাংলায়,বুদ্ধির সওদাগর হয়ে, তোমাদের তরে
আবার দেখিবে আমাদের সান্ধ্য টিভির পর্দায়।

রবিবার, ২২ মার্চ, ২০২০

করোনা মোকাবেলায় জনতা কার্ফিউ পালন

করোনা মোকাবেলায় জনতা কার্ফিউ পালন
নিধুভূষণ দাস

"The curfew tolls the knell of parting day,"

অষ্টাদশ শতাব্দীর ইংরেজ কবি টমাস গ্রে-র লেখা এবং ১৭৫১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত বিখ্যাত কবিতা(Elegy Written in a Country Churchyard)-র প্রথম চরণ এটি।

রবিবার ২২ মার্চ আমরা ভারতবাসী সকাল-সন্ধ্যা জনতা কারফিউ পালন করলাম। বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি কামড় বসিয়েছে। আমাদের দেশেও থাবা বসিয়েছে এই উপদ্রব।।এই মারণ ভাইরাসের মোকাবেলায় তথা সামাজিক/ব্যক্তিগত বিচ্ছিন্নতায় গিয়ে করোনা সংক্রমনের ধারা আটকে দেওয়ার এই জনতা কার্ফিউ ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর  আহবানে দেশবাসীর স্বেচ্ছা প্রয়াস।চিকিৎসক,নার্স তথা সর্বস্তরের স্বাস্থ্যকর্মী,পুলিশ ও দমকল কর্মী, সাফাইকর্মী ও সাংবাদিকগণ আমাদের জন্য।।।। এদিনও
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে আমরা বিকেল পাঁচটায় হাততালি দিয়েছি,কাসর-ঘন্টা বাজিয়েছি, প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে।

উক্ত কবিতায় কবি স্বীকৃতি-বঞ্চিত প্রকৃত নায়ক কৃষিশ্রমিক তথা শ্রমজীবী মানুষদের স্বীকৃতি দিয়েছেন এইভাবে:
"Full many a gem of purest ray serene,
The dark unfathom’d caves of ocean bear:
Full many a flow’r is born to blush unseen,
And waste its sweetness on the desert air."
আমরাও আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় সহায়ক নায়কদের প্রতি কৃতজ্ঞতা  জানালাম।

কবিতাটির চার চরণের প্রথম স্তবকের বাকি তিনটি চরণ হলো:

"The lowing herd wind slowly o'er the lea,
The plowman homeward plods his weary way, And leaves the world to darkness and to me."

কবি দিনের শেষে সন্ধ্যা নেমে আসার কথা বলছেন এবং  ক্লান্ত কৃষিশ্রমিকদের ঘরে ফেরার বর্ণনা দিচ্ছেন।এই প্রসঙ্গে curfew কথাটির তাৎপর্য বোঝার চেষ্টা করা যেতে পারে।
curfew কথাটির বাংলা পরিভাষা সান্ধ্য আইন। প্রাচীন ফরাসী শব্দ cuevrefeu এবং ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষের দিকের ইংরেজি-ফরাসি শব্দ coeverfu থেকে চতুর্দশ শতকের প্রথম দিকে ইংরেজি curfeu কথাটির আবির্ভাব যার আক্ষরিক অর্থ "সন্ধ্যাকালীন সংকেত,একটি নির্দিষ্ট সময়ে আগুন/আলো নেভানোর জন্য ঘন্টা বাজিয়ে সংকেত দেওয়া। এখন এর বুৎপত্তিগত অর্থ একটি নির্দিষ্ট সময়কালে,বিশেষত রাতে ঘরবন্দি থাকার সরকারি বিধান ও নির্দেশ।যেমন সন্ধ্যা-সকাল কর্ফিউ। জনতা কার্ফিউ পালনের নির্দেশ ছিলনা,ছিল আহ্বান।সান্ধ্য আইন জারি হয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায়।করোনার মোকাবেলা আইন-শৃঙ্খলার প্রশ্ন নয়, মহামারি ঠেকানোর একটি রাষ্ট্রিক-নাগরিক আয়োজন যাতে যথার্থ সাড়া মিলেছে।কার্ফিউ কথাটি এই প্রসঙ্গে আলাদা তাৎপর্য পায়।এতে নির্দেশ নেই,প্রণোদনা আছে।আর তা পালিত হয়েছে  দিনের বেলায়,কর্মক্লান্ত দিনের শেষে নয়।

শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০২০

এরাই জাতির বিবেক

এরাই জাতির বিবেক
নিধুভূষণ দাস

শীতের কষ্ট দূর হচ্ছে উত্তেজনায়
শিক্ষাঙ্গনে,রাস্তায়,চৌপথে তৈরি
টগবগে আবেগে কাঁপছে মাথারা
 তৃপ্তির হাসি অফিসে বসা বড় মাথাদের।

সামাজিক মাধ্যমে অসামান্য মাথাদের
জ্ঞানদানের প্রতিযোগিতা
নোবেলপ্রাপ্ত অধ্যাপক থেকে সবজানা মান্যবর
আমাদের শিক্ষিত করার অবিরাম চেষ্টায় রত
বিবৃতিতে,টিভি শো তে ,মিছিলে ঐশী বানী।

ঈশ্বরতুল্য জ্ঞানী নোবেলজয়ী মহাজন
 নির্দেশ দেন শীর্ষ আদালতকে
অমুক আইনটা বাতিল করতে হবে।
এরাই বুঝি জাতির বিবেক,গ্রীক নাটকের কোরাস।