শুক্রবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৫

আমি রাজা


     আমি  রাজা 
       নিধুভূষণ দাস 

 জবা গাছটা  মুড়ে দিলাম 
কষ্ট  হয়নি ,জানো  কেনো ?
চোখের জল শুকিয়ে গেছে 
কাঁদতে  গেছি ভুলে 
আমি এখন আমার সঙ্গে যুঝি 
যখন যারে সামনে পাই  মারি। 

মানুষ এখন মানুষ মারে 
ভয় দেখিয়ে শাসন করে 
প্রজার রক্তে স্নান করে 
মাদক বেচে অস্ত্র কেনে 
বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন দেখে 
ধর্মের নামে মৃত্যু আনে। 

ত্রাসের দেশের রাজা আমি 
জেনো তোমরা বিশ্ববাসী। 




মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৫

মাঘের দুপুরে কৌশিকী



মাঘের দুপুরে কৌশিকী 

নিধুভূষণ দাস 



মাঘের দুপুরে ডানদিকে ঘাড়  কাত করে
কৌশিকী  দেখছে নদিটিরে
মাঝখানে চড় ,দুই ফালি জলাশয়
মনে পড়ে  দেখেছে শৈশবে
স্টীমার যেতো,যেতো সার সার বজরা বর্মির হাটে
এখন শুধু চলে ডিঙ্গি শীতলক্ষায়।

মনে পড়ে,গায়ের পাশ দিয়ে এই নদি থেকে
গিয়েছিলো একটি খাল
বর্ষায় নদিটির মতোই যৌবনবতী হতো তা
মাঠ ভরিয়ে দিত জল আর  মাছে
আমন ধানের শীষ সোনা দিতো উপহার।

গায়ের মানুষ স্নান করতো ডালিমের রসের মতো জলে
সন্ধ্যার আগে গায়ের বধুরা কলসি কাঁখে
দল  বেঁধে ঘাট থেকে জল নিতো কলরবে।

 দুই পাড়ে এখন সার সার কারখানা
গ্রাম হয়েছে শিল্প-শহর ,পাতাবাহারের বেড়া
নেই,বাড়ি ঘিরে উঠেছে  ইটের দেয়াল।

নদি আজ হতযৌবনা,বিষাক্ত এর জল
ওড়নার আঁচলে চোখ মোছে কৌশিকী
টিউবওয়েলের জল দেয় বাবার শ্মশানে।


রবিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৫

কালনির্নয় পাঠ




কালনির্নয় পাঠ 

নিধুভূষণ দাস 


এখন কোন কাল ?
কী করে বলি ,বলোতো  দেখি !
কেনো মেঘ,বৃষ্টি ,শিশির ,কুয়াশা
দেখতে পাওনা বুঝি  ?
তোমার মতো মনের চশমা  আছে কোথায় আমার ,বলো।

পাখির কূজন ,ভোমরার গুঞ্জন,মাছির ভনভন
শুনতে কি পাওনা  একদম ?
হাঁ,কাক ডাকে শুনি প্রতিদিন।
সারা বছর থাকি মশারির নিচে
তাও নিতে হয় এন্কেফেলাইটিসের টিকা
ঋতু  কখন কোনটা ,কী করে বলবো বলো।

গরম কাপড় কি পরো না কোনোদিন ?
পরি,তবে ওটা  তো নিছক ফর্মাল ড্রেস
আর,শোনো, এখন মোষের শিং কাঁপেনা কোনদিন।

কৃষ্ণচূড়ায় কি ফোটেনা ফুল ?
ফোটে ,তবে তাতে আসেনা  যৌবন মনে
এসএমএস,ফেসবুকে ভালোবাসাবাসি
এই আছে,এই নেই।

বুধবার, ২৯ জুলাই, ২০১৫

রাত থাকুক রাতের মতো

রাত থাকুক রাতের মতো

নিধুভূষণ দাস 





আসছে রাত ,আসুক ,আসতে দাও
জ্বালিও না আলো ,শুধু জ্বলুক আকাশের তারা
আর  মাটির জোনাকি।

অনেক তো জ্বালালে বাতি
অমাবস্যায় করলে দীপাবলী
হলো কী  কল্যাণ তাতে পৃথিবীর ?

অন্ধকার রাতে আলোকিত প্রাসাদে
বসে কষলে  যুদ্ধের  ছক
যুদ্ধ শুরু হলে চালালে ব্ল্যাকআউট
কতটা আলোকিত হলো পৃথিবী ,বলো !

তারচে বরং আঁধারকে আঁধার থাকতে দাও
আঁধারে ভাবতে শিখি আলো কারে কয়
রাত থাকুক রাতের মতো,অনাবিল।

শুক্রবার, ১৫ মে, ২০১৫

শুভেচ্ছায় মিথ্যে নেই




শুভেচ্ছায় মিথ্যে নেই 

নিধুভূষণ দাস 



জন্মদিনে  কেউ শুভেচ্ছা জানালে ভালো লাগে
 ভালোবেসে  বলে "দীর্ঘজীবী হও !"
জানি  এতে বাড়েনা  আয়ু ,তবুও
খুশী  হই এই ভেবে শুভানিধ্যায়ী আছে কেউ।

ভাবিনা একদম মৃত্যুর পর স্মরণ করবে কিনা  প্রিয়জনেরা
এইরকম স্বপ্ন অলীক মনে করাই শ্রেয়
স্মরণসভায়  মৃতের সম্পর্কে অনেক ভালো ভালো মিথ্যে
বলা হয় মহিমার প্রলেপ দেওয়ার জন্য।

জন্মদিনের শুভেচ্ছায় অন্তত মিথ্যে থাকেনা এতটুকু। 

মঙ্গলবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৫

চলো বসি নীরবে




চলো বসি নীরবে 

নিধুভূষণ দাস 



এসো কথা বলি, নীরবে
বর্ষশুরুতে, বৈশাখ-প্রভাতে
নিই চন্দন-ফোঁটা কপালে
দুজন দুজনের,চলো যাই উদ্যানে
বসি গিয়ে নিরালায় নবীন কৃষ্ণচূড়ার
কিশলয় ছায়ায়। তুমি শাড়ি ,আমি পাঞ্জাবি
মুখোমুখি বসি ঘাসের আসনে ,শুনি
দোয়েলের গান  পল্লব-মর্মরে
হৃদস্পন্দন তোমার-আমার
কথা হয়ে ফুটবে চোখে-চোখে
যখন ওরা গাইবে রমনার বটমুলে
'এসো হে বৈশাখ  ...' চলো

বসি নীরবে মুখোমুখি নিরালায়
আজ এই পুন্য প্রভাতে। 

রবিবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০১৫

একুশে অমর



একুশে অমর 

নিধুভূষণ দাস 




আসছে ফাল্গুন ,পলাশের  দিন
'আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো
একুশে ফেব্রুয়ারী',তোমার-আমার
উজ্জ্বল উত্তরাধিকার।

ওই বসন্ত-দিনে কত কেঁদেছিল পলাশগুচ্ছ
মায়ের ভাষার দাবি  স্তব্ধ করতে ওরা
ঝরিয়েছিলো এতোগুলো তাজা প্রাণ
আজও কাঁদে তাই  ঢাকার পলাশ।

সাক্ষী পলাশ-বীথি ,ওই কসাইদের কবর এখন
ঘৃণার স্মারক,শ্রদ্ধায়-স্মরণে একুশে অমর। 

মঙ্গলবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০১৫

ভালো লাগে


ভালো লাগে 

নিধুভূষণ দাস 





ভালো লাগে নীরব বন্ধুদের  মাঝে
যারা  কথা বলে মৌমাছিদের  সঙ্গে,  কানে কানে
জনারন্যে কোলাহল ,চিত্কার ,চেচামেচি, কিংবা
রাজনৈতিক অবরোধে নিছক ঘরোয়া সংলাপ
বড্ড একঘেয়ে ,কর্কশ লাগে
তার চেয়ে ঢের ভালো অরন্যে পাখির কূজন
মধুভরা হলুদ ফুলে ফুলে ভ্রমরের গুঞ্জন।

আমার পৃথিবীকে আমি দিতে চাই ফুলের মতো মন
আমার প্রথম যেন হয়  অনন্ত আকাশ অনাবিল।


শনিবার, ১০ জানুয়ারী, ২০১৫

প্রয়োজনে মিলন

প্রয়োজনে মিলন 

নিধুভূষণ দাস 




যে যা বলে বলুক
আমি আমার মতো
আমার স্বপ্ন নিয়ে আমি বেশ আছি একা
আমার চেতনা আমাকে চালায়
আবেগে নয়,প্রয়োজনে
ওকে ,ওদের  কাছে ডাকি
লীন হই অন্যের আলিঙ্গনে।

ওরা আমার কেউ নয় ,না স্বজন ,না প্রিযবর
নেহাতই প্রয়োজনে মিলিত হই বারবার
যে যা বলে বলুক
আমি জানি আমার প্রয়োজন। 

শনিবার, ৩ জানুয়ারী, ২০১৫

সুখ-অসুখ



সুখ-অসুখ 

নিধুভূষণ দাস 


ওরা বলে সব ভালো ,খাওয়াপরা ,জীবনযাপন
কোথাও  নেই সমস্যা  কোনো।

বাহ্  বেশ !তাহলে ভালোই আছো  তোমরা
দেশটা স্বর্গ বানিয়ে,দেবে একটু হিস্যা এই  সুখের ?

দিতে পারি যদি হও আমাদেরই মতো অনুগত ভৃত্য
প্রশ্ন নয় কোনো ,হুজুরের গুনকীর্তন শুধু।

কাজ নেই এই সুখে ,ভালো আছি অসুখে-বিসুখে
আকাশের পাখিরা দেখো ঢের সুখে আছে।