বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০১৪

ভূতের গল্প (৫)

                         ভূতের গল্প (৫)
                                    নিধুভূষণ দাস 
হঠাত তার আবার আমার  মেয়ের ব্যাপারে আগ্রহ কেনো ,এই ভেবে আমি একটু শঙ্কিত হলাম। ভাবলাম ,আসল কথা বলবোনা। ওকে বললাম ,অন্নু আমার মেয়ে নয়,একটি কল্পিত চরিত্র মাত্র ,আমার কোনো মেয়ে নেই। ওর মুখে একটা বাঁকা হাসি দেখলাম। বললো , ভাবছো  যা বলবে তাই বিশ্বাস করবো ,তাই না ?আমি সব জানি।  তোমার মেয়ের বয়স ১৪,সে ক্লাস  টেন -এ  পড়ে ,সেন্ট যোসেফ  স্কুলে। খুব ভালো মেয়ে ,অনেক  বড়  হবে ,স্কলারশিপ নিয়ে  অক্সফোর্ড -এ  চলে যাবে পড়াশোনা করতে। তুমি  ওকে চিনতেই পারোনি ,সম্ভব-ও  নয় তোমার মতো সংকীর্ণ মনের মানুষের পক্ষে। 
তার কথা  শুনে আমি তো হতভম্ব ! সে এতসব জানলো কী করে ,ভেবে পাচ্ছিনা । অন্নুর  কুষ্ঠিতে  তো  লেখা আছে  ও বিদেশে পড়তে যাবে ,বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হবে ,পরে নাসায়  বড়  গবেষক হবে। আমি  উপায়ান্তর না দেখে তার কাছে আত্মসমর্পণ করলাম। বললাম ,ক্ষমা কারো ,আমি বুঝতে পারিনি। আবার হাসলো সে। আমি বললাম ,তুমি তো দেখছি সব জানো ,প্লীজ  বলবে আমার আগামী দিনগুলি কেমন যাবে ?ও বললো ,সেটা জানি কিন্তু বলবোনা ,তাতে তোমার  ক্ষতি হবে। কি ক্ষতি হবে ? সে বললো ,ভালো বললে তুমি আত্মতুষ্টিতে ভুগবে ,খারাপ বললে হতাশায় আছন্ন  হবে। বরং কর্তব্য পালন করে যাও ,তাতেই ফল মিলবে। আসলে তুমি নিজেকেও চিনতে পারোনি  এতদিনে। যে নিজেকে চেনেনা ,সে অন্যকে চিনবে কী করে। উদার হওয়ার চেষ্টা করো ,দেখবে অনেক কিছু নিজেই বুঝতে পারবে। 
ও  মিথ্যে বলেনি এক বিন্দুও।উদারতা আমার স্বভাব বিরুদ্ধ ,সংকীর্ণতা  আমার উত্তরাধিকার। জানতে চাইলাম, কীভাবে উদার হওয়া যায়। ও বললো, চেষ্টা করো,অনুশীলন করো ,উদার  মানুষদের অনুকরণ করো ,দেখবে হয়ে যাবে। আমি  তো  উদার  কে তাই জানিনা ,সবাইকে আমার মতোই  মনে হয়। আমার এই আত্মোপলব্ধি  বুঝতে পেরে সে  বললো, নিজেকে বুঝতে পারলেই উদার হতে পারবে। শোনো, তোমাদের ওই দিল্লিতে কে  একজন কেজরিওয়াল মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন  ,ওকে দেখো তাহলে বুঝতে  পারবে  উদারতা কাকে বলে। উনি হয়তো  এযাত্রায় সফল হবেননা ,ওকে হেয় করার জন্য দুর্নীতিপরায়ণ রাজনীতিক আর রাজনৈতিক দল ও ছদ্মবেশী সমাজসেবীরা  এককাট্টা হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত  উনি  সফল হবেন ,অনেক সময় লেগে যাবে  কারণ ,কবির ভাষায় ,দিকে দিকে নাগিনীরা ফেলিতেছে বিষাক্ত নিঃশ্বাস। ওনার  সাময়িক ব্যর্থতা দেখে হতাশ হয়োনা,তাহলে কিন্তু তোমার আত্মোন্নতি  হবে না। 
যাক এসব জ্ঞানের  কথা,এখন বলো তোমার কী আদৌ ইচ্ছে আছে মন বড় করার ,নাকি যেমন আছ তেমনই থাকতে চাও। যদি  নিজেকে বদলাতে না চাও তবে মেয়েকে হারাবে ,ও তোমার সঙ্গে থাকতে পারবেনা ,তোমার ধরাছোঁয়ার  বাইরে চলে যাবে ,তোমাদের  সংকীর্ণতা ওকে গ্রাস করতে পারবেনা। নিজের সিদ্ধান্ত  নিজেকেই নিতে হবে। তোমার মেয়ে কিন্তু পিঙ্কিদের মতো অসহায় হয়ে থাকবেনা।তোমাদের সংকীর্ণতার  পরিবেশে পিঙ্কির  মতো মেয়েদের অনেক বড়  যে জগত  সে নিয়ে ভাবার সুযোগ নেই। তাই তারা  অসহায় হয়ে থাকে। প্রতিবাদী হতে পারেনা।প্রতিবাদী হতে গেলেই তসলিমা  নাসরিন হতে হয় ,দেশছাড়া  হয়ে যেতে হয়। তোমাদের এলাকায় নারীবাদী হওয়া মানে  ভয়ংকর বিপদকে আবাহন করা। তোমরা যে বিশ্বের এক  তামাশাছন্ন  এলাকার  বাসিন্দা   (চলবে)
                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                               

মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০১৪

ভূতের গল্প (৪)

                                ভূতের গল্প (৪)
                                             নিধুভূষণ  দাস

পরলোকের এই মেয়েটির কথা শুনে আমার কবির কথা মনে পড়লো  যিনি বলেছেন ,মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে /মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই। পরলোকে গিয়েও কি মানুষ  এই সুন্দর পৃথিবীর কথা ভুলতে পারেনা ,মায়া ছাড়তে পারেনা ?আবার সঙ্গে সঙ্গে এও ভাবলাম , কী করতে পারবে ওরা আমাদের ,আমাদের প্রযুক্তি দিন দিন এতো উন্নত হচ্ছে যে, আমরা হয়তো  অচিরেই ওদের ব্লক করে দিতে পারবো ,তখন আর পৃথিবীর সঙ্গে  ওদের কোনো সংযোগ থাকবেনা। ওদের এধরনের হুমকিতে আমাদের  আর ভয়ের কিছু  থাকবেনা ,আমরা নির্ভয়ে  যাচ্ছেতাই করে যেতে পারবো ,দিল্লিতে তথা দেশের নানা স্থানে  ধর্ষিতা হয়ে নির্ভয়ারা মারা যাবে ,আমরা দুদিন-তিনদিন মোমবাতি মিছিল করে শান্ত হয়ে যাবো ,দেশ এবং পৃথিবী আপন গতিতে চলতে থাকবে নিজের ছন্দে। ভাবছিলাম আর মনে মনে  হাসছিলাম। এমন সময় ও  বলে উঠলো ,কী, ভাবছো   আমরা তোমাদের  কিছু করতে পারবোনা। ভুল ,প্রযুক্তির গরিমাই তোমাদের  কাল  হবে ,তোমরা   ডুবে যাবে ।  ঠেকাতে পারো  ভূমিকম্প ,সুনামি আর নানারকম ঘুর্নিঝড়ের মতো বিপর্যয় ?পারোনা । তোমাদের   প্রযুক্তির চেয়ে প্রাকৃতিক শক্তি অনেক বেশি  শক্তিশালী। আমরা  প্রকৃতিরই  অঙ্গ ,বুঝলে ।   
যাকগে ,শয়তান না শোনে  ধর্মের কাহিনি। তুমি যদি মানে করো তোমার সঙ্গে আমার কিছু করার নেই তবে আমি আসি ,আর সময় নষ্ট করবোনা অযথা। আমার কথাগুলি মানে হয় ভালো লাগছেনা  তোমার। এই কথা শুনে আমার হঠাত আবার ভয় ধরে গেলো। হাত জোড় করে বললাম ,না ভালো লাগছে ,বলো-কত অজানা কথা জানতে পারছি ,তুমি না বললে তো জানতেই  পারতামনা পিংকি কীভাবে মারা গেলো। ও  আমার এই কথায় খুশি হলো। বললো ,জানো  ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা নারী নির্যাতন করেছে ,গণহত্যা আর লুটপাট চালিয়েছে  তাদের তো বাংলাদেশে সরকারিভাবে পুনর্বাসন হয়ে গিয়েছিলো।দেখলেতো  আবার তাদের বিচার শুরু হলো এত বছর পর ,ফাঁসিও হয়ে গেছে ,আরও হবে। আমরা না থাকলে তা হত না গো । আমাদের প্রভাবেই তা সম্ভব হচ্ছে ,কিছু  মানুষের বিবেককে আমরাই নাড়া  দিয়েছি ,তারাই শাহবাগ আন্দোলন করেছে ,তার  আগে  আমাদের ইচ্ছায়ই বাংলাদেশের আজকের শাসকরা তাদের নির্বাচনী ইস্তাহারে একাত্তুরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের অঙ্গীকার রেখেছিলো। বিশ্বাস হচ্ছেনা তো। হবে একদিন নিশ্চিত যদি এনিয়ে মাথা ঘামাও । তোমাদের মুস্কিল কী জানো ? তোমরা কোনো বিষয়েই ঐকান্তিক নও ,বড়ো  বেশি আত্মকেন্দ্রিক ,চারপাশে কী ঘটছে তা নিয়ে মাথা ঘামাতে চাওনা ,ফলে শয়তানদের পোয়াবারো। এমন চলতে থাকলে শেষ পর্যন্ত শয়্তানরাজ কায়েম হবে ,তোমরা পোষা পশুর মতো জীবন যাপন করতে বাধ্য হবে। 
অনেক  বকবক করলাম ,এখন বলো তোমার  মেয়ে আন্নুর কথা. ও  কত    বড়,কীকরে,ওর ভবিষ্যত নিয়ে   কী ভাবনা তোমার।   (চলবে )                                                                                                         
                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                             

সোমবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০১৪

ভূতের গল্প (৩)

                       ভূতের গল্প (৩)

                                  নিধুভূষণ দাস 

আমার যত বায়না ছিল  এই বন্ধুর কাছেই। পড়তাম  ঢাকা  মেডিকেল কলেজে। ঠিক করেছিলাম পাশ করার পর বিয়ে করবো।সব পাকা।আর এক বছর বাকি ,তারপরই আমরা  বিএফ -জিএফ হয়ে যাবো স্বামী -স্ত্রী। দারুন উত্সাহ আর উত্তেজনা  দুজনেরই। এক ছুটির দিনে ঠিক  হলো বাইকে  করে সাভার  যাবো জাতীয় স্মৃতি সৌধে ,ওখানে  একে অপরকে বাগদানের আংটি পরাবো। তা ছিল ২৫শে  ডিসেম্বর ,বড়দিনের ছুটি ,১৯৮৮ সাল। সকালেই রওনা দিলাম। শীতের সকালের হিম হাওয়াকে মনের  উত্তেজনার উষ্ণতা দিয়ে পরাজিত করে উত্তুরে হাওয়ার উজানে চললো আমাদের দুচাকার গাড়ি। সকাল ১০টার মধ্যে পৌঁছে গেলাম  ওই পবিত্র স্থানে। আংটি পরালাম পরস্পরকে ,চুমু খেলাম, মিষ্টিও। তারপর ঢাকা ফেরার  পালা।সূর্য তখন মাথার ওপরে আসেনি ,উত্তুরে হাওয়ার বিরাম নেই। আমাদের গাড়ি চলছে ৬০কিমি বেগে। টঙ্গীর কাছে  হঠাত  বিপরীত দিক থেকে আগুয়ান একটি বড়  লরি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সোজা আমাদের বাইকে আঘাত করলো। তারপর  কী  হলো জানিনা। এখন আমরা দুজনই তোমাদের জগতের বাইরে। তুমি হয়তো অনেক রকম ভূতের কথা শুনেছো -পেতনি ,পেঁচাপেঁচি,নিশি  ডাক ,স্কন্ধকাটা। আমাদের যদি ভূত বলোই তবে আমরা কিন্তু  সেরকম ভূত  নই।   আসলে বন্ধু ভূত ,তোমার  মতো ভালো মানুষদের সাহায্য করি বরাবর। ভগবানই আমাদের  পাঠান সাহায্য করতে। 
জানো, আমরা  দুজন স্বামী-স্ত্রী হয়েই আছি এখন এই  জগতে। যখন যেখানে খুশি চলে যেতে পারি। আমার স্বামী  এখন অন্য একটা কাজে  গেছে ,ফিরবে মধ্যরাতে। তখন আমরা খেয়েদেয়ে ঘুমুবো। ভাবছো ,ভূতেরা আবার ঘুমুয় নাকি !এ আবার কেমন কথা ? হাঁ গো,আমরাও  তোমাদের মতোই।আমরাও খাইদাই,ঘুমাই,আনন্দ-উল্লাস করি ,শুধু তোমাদের মতো বাব-মা  হতে  পারিনা ,তাতে বারন  আছে,নয়তো আমাদের দেশে জনবিস্ফোরণ ঘটবে ,যেমন তোমাদের দেশে হয়েছে। এমনিতেই অপঘাতে মৃত্যুর  পর কত মানুষ তোমাদের জগত থেকে আমাদের দেশে এসে আশ্রয় নিচ্ছে।আমরা ভালো মানুষ যারা তাদের কখনো বলিনা,ঠাই নেই ঠাই নেই ,ছোটো  সে তরী। তাদের  আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু যারা দুষ্টু ,তাদের ছেড়ে কথা বলিনা। যেমন ,পণের  বলি মেয়েদের আমরা স্বাগত জানাই ,আর যারা তাদের অপঘাতে মৃত্যুর কারণ তাদের প্রতি থাকে আমাদের তীব্র  ঘৃণা ,প্রতিশোধ নিই তাদের ওপর। নারীভ্রুণ  হত্যাকারী  আর বধূ  নির্যাতনকারীদের তোমাদের আইনি ব্যবস্থায়  যে বিচার হয় তা  মোটেও যথেষ্ট  নয়, আমরা  নিজেরাই ওদের বিচার করি ,বাড়িতে রোগ ঢুকিয়ে দিই,দুর্ঘটনার  কবলে ফেলি ,জীবন দুর্বিষহ  করে তুলি।    
তুমি  জানো  কীনা ,কিছুদিন আগে  তোমাদের শিলিগুড়িতে দেশবন্ধুপাড়ায় পিঙ্কি  নামে  একটা ফুটফুটে মেয়ে  মারা  গেলোনা ,সে আসলে আত্মহত্যা করেনি ,তাকে মেরে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। আর বলিহারি তোমাদের  পত্রিকাগুলির ,লিখে দিলো  মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে।  লজ্জা  হওয়া উচিত তোমাদের । হত্যাকে বেমালুম আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দাও  জেনেবুঝে। তোমাদের  পৃথিবীতে মনুষ্যত্ব  একেবারে লোপ পেতে বসেছে। জানো,   পিঙ্কির  স্বামীর এখন  কী অবস্থা,যে হাতে মেরেছে ওকে, সেই হাত দুটি  অবশ ,ওকে অনেক যন্ত্রনা সহ্য করে মরতে হবে ,সহজে মরবেনা ,সব যাবে। দোরে  দোরে গিয়ে ভিক্ষা করতে হবে ,দেখে নিও। আমরা ওকে ছাড়বোনা। যে পুলিশ  ও  সাংবাদিকরা উল্টাপাল্টা  করেছে তাদেরও ছাড় নেই। পিঙ্কি এখন আমাদের সঙ্গেই  আছে। আমরা  ওকে  খুব ভালোবাসি। বেচারী এখনও কত কাঁদে  জানো,তোমাদের পৃথিবীর নিষ্ঠুরতার কথা মনে করে ?তোমাদের পৃথিবী আমাদেরও,একে আমরা নিষ্ঠুর হতে দিতে পারিনা ,হতে দেবোনা ,বুঝলে ? (চলবে ) 
                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                            

রবিবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০১৪

ভূতের গল্প (২)

                            ভূতের গল্প (২)
                                       নিধুভূষণ দাস 


ভাবছি ভগবানের  সঙ্গে  ওর  সম্পর্ক  কি ? আমি  ভগবানকে ডেকেছি  ঠিকই কিন্তু  তাই বলে ও  আসলো কেনো। মনে পড়ে গেলো শ্যাকস্পিয়ারের টেম্পেস্ট   নাটকের অরিয়লের কথা।  অরিয়েল   নির্দেশ পালন করতো নির্জন  দ্বীপের  অধীশ্বর  নির্বাসিত ডিউকের।ও  কি তাহলে আমার নির্দেশ পালন করতে এসেছে ? আমাকে গল্পের প্লট  বলবে ? নাকি  ম্যাকবেথ নাটকের ডাইনিদের  মতো বিপথগামী  করবে ?বলতে নেই ,আমায়  সত্যি সত্যি এক  অজানা  সন্দেহ এবং আতংক গ্রাস  করছিলো  সেই মুহূর্তে। আমি  ওর  কথার   উত্তর  দিতে পারছিলামনা। ভয়ে গলা  শুকিয়ে  গিয়েছিলো।  কী করবো  ভেবে পাচ্ছিলামনা। ঘরের পরিবেশ গুমোট লাগছিলো। মনে  হচ্ছিলো, কেউ  যদি আসতো  এই মুহূর্তে ! শুনেছি নানারকম ভূত আছে  যারা মানুষকে বিপন্ন  করে ,মেরেও ফেলে। ওকি কোনো ভূত, নাকি অরিয়েলের  মতো কেউ আমাকে সাহায্য করতে এসেছে ? এসব যখন ভাবছি তখনই ওই ছায়ামূর্তি  প্রবোধ দিতে আমাকে বললো ,"তুই যা ভাবছিস  তা-ই ,তবে আমি  তোর  ক্ষতি  করতে নয় ,সাহায্য করতে এসেছি। তোর গল্প  চাইতো ? শোন ,বলছি। আমি  বললাম ,"তুমি গল্পকার নাকি যে,  গল্প  বলবে? ভূত আবার  গল্পও বলতে পারে নাকি ?"আমার  কথা শুনে সে মৃদু  হেসে বললো ,"আমার  নিজেরও তো  গল্প থাকতে পারে,যেমন  তোর আছে,তাইনা ? শুনবি  আমার  গল্প ?"  কী  আর  করবো ,বললাম ,"বলো  কী  বলবে। "আমার অনুমতি পেয়ে ও বেজায় খুশি ,ঠোঁট জুড়ে হাসি  ছড়িয়ে  পড়লো। 
শুরু হলো  তার গল্প  বলা। জানিস  বেশি দিনের কথা নয় ,বছর দশেক  হবে। আমার তখন বয়স  আর  কতো ,বছর কুড়ি । প্রেম  করতাম সহপাঠীর  সঙ্গে। ওর  নামটা  বলবোনা, আমারটাও না। ছোটবেলা থেকেই আমরা  সহপাঠী,অন্তরঙ্গ বন্ধু। কলেজে  উঠে  বন্ধুত্ব যে কখন প্রেমে পরিনত হলো ,বুঝতে পারিনি। আমি বাবামায়ের একমাত্র সন্তান। ওরা খুব ব্যস্ত মানুষ ,দুজনেই উকিল। সারাক্ষণ ব্যস্ত ,আদালতে ,চেম্বারে।আমাকে একদম সময় দিতে পারতনা ,তাই বন্ধুই হয়ে উঠলো আমার সব।  (চলবে )

শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০১৪

ভূতের গল্প

নিধুভূষণ দাস 

    আমার মেয়ে অন্নু  বায়না করেছে তাকে প্রতিদিন একটা ভূতের গল্প শোনাতে হবে। ভূতের গল্প তো দূরের কথা, আমি গল্পই বলতে পারি না। তাও আমাকে ওর কথায় সায় দিতে হলো। মেয়ে আমার বড় জেদি, রাগি এবং অভিমানি। না বল্লে ঠোট ফুলবে, কথা বন্ধ হবে। এমন পরিস্থিতি তে আমার নিজেরই কান্না পেয়ে যায়। তাই রাজি হলাম, কিন্তু গল্প পাব কোথায় ? নাওয়া-খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল আমার। অন্নু কে যে গল্প বলতে হবে, কথা দিয়েছি। ভাবছি তো ভাবছি , গল্পের প্লট খুঁজে পাচ্ছিনা। দুপুরে খাওয়ার পর ঘুমোতে গেলাম কিন্তু ঘুম এলো না। অনেকক্ষণ গড়াগড়ির পর লেখার টেবিলে গিয়ে বসলাম। কিন্তু গল্প আসলোনা । বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামল , একা বসে আছি পড়ার টেবিলে। সন্ধায় যে বাতি জ্বালাতে  হয় তাও ভুলে গেলাম , সেই এক ভাবনায়। ঘরে আমার সামনে দূরের দেয়াল ঘেঁষে রয়েছে ফার্নিচার। ওই দিকটায় বেশ অন্ধকার। 

   হঠাত দেখি কী ওদিকে একটি ছায়া ভেসে ওঠলো - প্রথমে হাথ তারপর স্লিভ্স , ঠ্যাং , পা এবং স্কার্ট। আমি তো ভয়ে জড়োসড় । আমি শুধু  ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলাম। তারপর দেখলাম ছায়াটি এক লাফে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। ভাবতো তখন আমার কী ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা। শিঁরদারা শীতল হয়ে গেল। ছায়াটি আমার দিকে কটমট তাকিয়ে থাকলো , পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখল। আমি ভয়ে বোবা হয়ে গেলাম। কাউকে ডাকব সেই অবস্থা নেই। 

   এমন সময় সে আমাকে বললো 'তুই আমাকে ডাকলি কেন ?' আমার তো মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার অবস্থা। তোতলাতে তোতলাতে বললাম , 'না তো, আমি ডাকি নি তো।' সে বলল, 'কেন তুই গল্পের প্লটের জন্য সারাক্ষণ ভগবান ভগবান বলে ডাকছিলি না ? তাই তো এলাম।' শুনে আমি থ। ও জানলো কী করে আমার মনের কথা। (চলবে)